বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি: কারণ, প্রভাব ও উত্তরণের পথ
ভূমিকা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতির প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্নীতি কেবল একটি নৈতিক স্খলন নয়, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক সুসংহতকরণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে একটি পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধক। এই ব্যাপক দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থাকে ক্ষয় করে, যা একটি কার্যকর রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিকেই দুর্বল করে দেয়। দুর্নীতির সর্বব্যাপী প্রকৃতি এর মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে, এর প্রভাব মূল্যায়ন করতে এবং একটি আরও জবাবদিহিমূলক ও নৈতিক রাজনৈতিক পরিবেশের দিকে একটি সম্ভাব্য পথ তৈরি করতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ, প্রমাণ-ভিত্তিক বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
এই নিবন্ধটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করবে: (১) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত বলে বিবেচিত হন? (২) দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রাজনীতিকে কি আদৌ মুক্ত করা সম্ভব? (৩) সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দিতে কী কী সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে? ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন শিক্ষায়তনিক বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত গবেষণালব্ধ তথ্য সংশ্লেষণ করে, এই প্রতিবেদনটি বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলির একটি ব্যাপক ধারণা দেবে এবং সংস্কারের জন্য বাস্তবসম্মত সুপারিশ উপস্থাপন করবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও ঐতিহাসিক ধারা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্নীতি একটি গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। বৈশ্বিক সূচকগুলোতে এর অবস্থান এবং জনমানসে এর ব্যাপকতা সুস্পষ্ট।
দুর্নীতির বর্তমান অবস্থা (সিপিআই র্যাঙ্কিং ও জনমত)
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৪ সালের দুর্নীতি ধারণা সূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১০০ এর মধ্যে ২৩ স্কোর অর্জন করেছে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
জনগণের ধারণাও এই বাস্তবতাকে সমর্থন করে। জরিপকৃত নাগরিকদের ৭২% মনে করেন যে সরকারি দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা
বাংলাদেশের সিপিআই স্কোরের ক্রমাগত পতন, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা কেবল একটি পরিসংখ্যানগত অস্বাভাবিকতা নয়; বরং এটি গভীর প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয় এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। এই ধারাবাহিক পতন, বিশেষ করে ২০১৭ সালের ২৮ থেকে ২০২৪ সালের ২৩-এ নেমে আসা, এটি প্রমাণ করে যে দুর্নীতি কেবল বিদ্যমান নয়, বরং পদ্ধতিগত দুর্বলতার কারণে এটি সক্রিয়ভাবে আরও খারাপ হচ্ছে। সাব-সাহারান আফ্রিকার গড় স্কোরের সাথে তুলনা এই অবক্ষয়ের তীব্রতাকে আরও তুলে ধরে।
টিআই-এর প্রতিবেদনগুলো আরও উল্লেখ করে যে, বাংলাদেশের এই অবনতিশীল প্রবণতা একটি কর্তৃত্ববাদী ক্লেপ্টোক্র্যাটিক শাসনের বৃহত্তর প্রভাবকে প্রতিফলিত করে, যা ক্ষমতার সকল ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্নীতিকে সমর্থন করেছে
পূর্ববর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করলেও, বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত
সারণী ১: বাংলাদেশের দুর্নীতি ধারণা সূচক (CPI) প্রবণতা (২০১২-২০২৪)
বছর | সিপিআই স্কোর (১০০ এর মধ্যে) | বৈশ্বিক র্যাঙ্ক (১৮০টি দেশের মধ্যে) | দক্ষিণ এশিয়ার র্যাঙ্ক (আফগানিস্তানের সাপেক্ষে) |
২০১২ | ২৬ | N/A | ২য় সর্বনিম্ন |
২০১৩ | ২৭ | N/A | ২য় সর্বনিম্ন |
২০১৪ | N/A | N/A | N/A |
২০১৫ | N/A | N/A | N/A |
২০১৬ | N/A | N/A | N/A |
২০১৭ | ২৮ | N/A | N/A |
২০১৮ | ২৩ | N/A | N/A |
২০১৯ | ২৩ | N/A | N/A |
২০২০ | ২৩ | N/A | N/A |
২০২১ | ২৩ | N/A | N/A |
২০২২ | ২৫-২৮ এর মধ্যে | N/A | N/A |
২০২৩ | ২৪ | ১৪৯ | ২য় সর্বনিম্ন |
২০২৪ | ২৩ | ১৫১ | ২য় সর্বনিম্ন |
দ্রষ্টব্য: কিছু নির্দিষ্ট বছরের জন্য বৈশ্বিক ও দক্ষিণ এশিয়ার র্যাঙ্ক তথ্যে উপলব্ধ না হওয়ায় N/A উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, সামগ্রিক প্রবণতা এবং তুলনামূলক অবস্থান সিপিআই প্রতিবেদনগুলোতে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুর্নীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, যা ঔপনিবেশিক শাসনকাল থেকে চলে আসছে। ঔপনিবেশিক শাসকরা এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ আমলার মাধ্যমে জনগণকে শোষণ করত
রাজনৈতিক দুর্নীতির মূল কারণসমূহ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্নীতির কারণগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, বরং একটি জটিল, আন্তঃসংযুক্ত জাল তৈরি করে। এই কারণগুলো শাসনব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত।
একতরফা শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতার অপব্যবহার
একটি একতরফা শাসনব্যবস্থা ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঘটায়, যেখানে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব
প্রশাসনিক ও সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব দুর্নীতির প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়
নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাব
নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থে দুর্নীতিতে লিপ্ত হন
দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও আইনের শাসনের সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে দুর্বল আইনের শাসন এবং অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও সততার কাঠামোর অভাবে
অর্থ পাচার ও প্রতিহিংসার রাজনীতি
ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করছে
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব ও অর্থায়নে অস্বচ্ছতা
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক কাঠামোর অভাব রয়েছে। মনোনয়ন এবং অর্থ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দলীয় প্রধানদের হাতে কেন্দ্রীভূত
পৃষ্ঠপোষকতা ও অভিজাতদের ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ
গবেষণায় দেখা যায়, রাজনীতিবিদরা আর্থিক লাভের জন্য তাদের অবস্থানকে ব্যবহার করে পৃষ্ঠপোষকতার নেটওয়ার্ক তৈরি করেন এবং ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে থাকেন
দুর্নীতির কারণগুলো একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত, যা একটি জটিল চক্র তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, "একতরফা শাসনব্যবস্থা"
দুদক
আর্থিক অসচ্ছলতা এবং বেকারত্ব
সারণী ২: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্নীতির প্রধান কারণসমূহ
কারণের ধরণ | সুনির্দিষ্ট কারণ | বিবরণ | সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র |
শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক | একতরফা শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতার অপব্যবহার | ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, জবাবদিহিতার অভাব, প্রতিহিংসামূলক আচরণ। | |
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব | প্রশাসনিক কার্যক্রমে অস্বচ্ছতা, অকার্যকর দুদক, রাজনৈতিক প্রভাব। | ||
দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও আইনের শাসনের সীমাবদ্ধতা | দুর্বল আইন প্রয়োগ, বিচার বিভাগ ও পুলিশের দুর্নীতি। | ||
পৃষ্ঠপোষকতা ও অভিজাতদের ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ | রাজনৈতিক পদ ব্যবহার করে আর্থিক লাভ, স্বজনপ্রীতি, চুক্তি প্রদানে অনিয়ম। | ||
রাজনৈতিক ব্যবস্থার নির্দিষ্টতা | রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব ও অর্থায়নে অস্বচ্ছতা | দলীয় প্রধানদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত, অস্বচ্ছ নির্বাচনী অর্থায়ন, ধনী ব্যক্তিদের মনোনয়ন ক্রয়। | |
অর্থ পাচার ও প্রতিহিংসার রাজনীতি | ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ পাচার, অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করা। | ||
সামাজিক-অর্থনৈতিক | নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাব | ব্যক্তিগত স্বার্থে দুর্নীতি, উচ্চাভিলাষ, দ্রুত ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। | |
বেকারত্ব ও আর্থিক অসচ্ছলতা | মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা, সমাজে দুর্নীতির প্রসার। |
দুর্নীতির ভয়াবহ প্রভাব: শাসন, অর্থনীতি ও সমাজে
রাজনৈতিক দুর্নীতি বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে, যা দেশের অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বাধা
দুর্নীতি বাংলাদেশের উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। কৃষি, শিল্প, ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক খাতের দুর্নীতি দেশজ উৎপাদনকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে
দুর্নীতির প্রভাব কেবল আর্থিক ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমাজের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে মৌলিকভাবে ব্যাহত করে
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির দুর্বলতা
দুর্নীতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার ও মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থাকে দুর্বল করে
জনগণের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া ও বৈষম্য বৃদ্ধি
দুর্নীতির ফলে মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়
জনসেবার মান হ্রাস ও প্রশাসনিক অদক্ষতা
বর্তমানে বাংলাদেশের কোনো সরকারি বিভাগ বা দপ্তর দুর্নীতিমুক্ত নয়। প্রশাসনজুড়ে ঘুষ, সরকারি তহবিল আত্মসাৎ, অপচয় ও চুরি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে
জলবায়ু অর্থায়নে দুর্নীতির ঝুঁকি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জলবায়ু তহবিল আত্মসাৎ ও অনিয়মের ঝুঁকিতে রয়েছে
দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি কি আদৌ সম্ভব? একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা একটি জটিল এবং বহু-মাত্রিক চ্যালেঞ্জ, তবে এটি অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন গভীর রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং পদ্ধতিগত সংস্কার।
চ্যালেঞ্জসমূহ ও বিদ্যমান বাস্তবতা
দুর্নীতির গভীর শিকড়, যা প্রায়শই রাজনৈতিক দল এবং আমলাদের দ্বারা সমর্থিত
সিপিআই ২০২৪ সালের প্রতিবেদনটি তুলে ধরে যে, এই সময়ের মধ্যে দেশে "ক্লেপ্টোক্র্যাসি-চালিত স্বৈরাচার" তার শিখরে পৌঁছেছিল, যেখানে "রাজনৈতিক ও শাসনব্যবস্থা দুর্নীতিকে উৎসাহিত ও সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়েছিল"
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপের গুরুত্ব
শিক্ষায়তনিক বিশ্লেষণ দৃঢ়ভাবে জোর দেয় যে, "দুর্নীতিবিরোধী বৈশ্বিক প্রকল্পগুলোকে সমর্থন করার জন্য রাজনীতিবিদদের দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা তাদের কার্যকারিতা মূল্যায়নে ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ"
আশার আলো: সাম্প্রতিক সংস্কার প্রচেষ্টা ও সম্ভাবনা
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর, বাংলাদেশ জনআস্থা পুনর্গঠন এবং তার গণতান্ত্রিক চেতনা ফিরিয়ে আনার জন্য "আশার একটি ক্ষীণ আলো" দেখতে পাচ্ছে, যদি সিদ্ধান্তমূলক ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়
জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপট এবং পরবর্তীতে অসংখ্য সংস্কার কমিশন গঠনের ফলে
সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় করণীয়: একটি কর্মপরিকল্পনা
বাংলাদেশে সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতি নিশ্চিত করার জন্য একটি সমন্বিত ও বহু-মাত্রিক কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। এই পরিকল্পনা আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সংস্কারের সমন্বয় সাধন করবে।
আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শক্তিশালীকরণ ও স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ: দুদককে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে এবং এর কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করতে হবে, যার মধ্যে অন্তত একজন নারী কমিশনার থাকবেন
18 । দুদক নেতৃত্বে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিরা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে নিয়োগ পান21 । নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরুর আগে বাধ্যতামূলক প্রাক-তদন্ত অনুসন্ধানের বিধান বাতিল করা উচিত18 ।বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি: বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে
19 । বিচারক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের জন্য আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলন অনুযায়ী আচরণবিধি প্রণয়ন করা উচিত22 । বিচার প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়/অনলাইন ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে23 ।প্রশাসনিক সংস্কার ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের লক্ষ্য হলো প্রশাসনিক কাঠামো ও শাসন ব্যবস্থায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা
19 । সরকারি কার্যক্রমে স্বজনপ্রীতি ও ব্যক্তিগত লাভ বন্ধ করতে "স্বার্থের সংঘাত" আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা আবশ্যক18 । উচ্চপর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রেষণে নিয়োগ বন্ধ করা উচিত22 ।তথ্য অধিকার আইন ও হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ: এই আইনগুলো (তথ্য অধিকার আইন ২০০৯, হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা আইন ২০১১) প্রণীত হলেও
13 , বিশেষ করে সরকারি তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতার অভাবে11 এদের কার্যকর প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি।স্বার্থের সংঘাত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে সুপারিশকৃত এই আইনটি
18 জনস্বার্থকে নীতিগত দখল এবং দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ1 ।সরকারি সেবায় এন্ড-টু-এন্ড অটোমেশন: পুলিশ স্টেশন, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং অন্যান্য সরকারি পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে এন্ড-টু-এন্ড অটোমেশন চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে দুর্নীতির সুযোগ কমে
18 ।
রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিতকরণ: সংস্কার শুরু হতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর থেকে
24 । দলীয় সংবিধান পরিবর্তন করে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে22 । এর মধ্যে দলীয় নেতাদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ও বংশানুক্রমিক রাজনীতি বাতিল করা এবং সকল স্তরে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা অন্তর্ভুক্ত22 ।নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব কমাতে কঠোর নির্বাচনী অর্থায়ন আইন প্রয়োজন
25 । রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের তহবিলের উৎস ও ব্যয়ের বিবরণী জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে18 । নির্বাচন কমিশন (ইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং দুদকের সহায়তায় প্রার্থীদের হলফনামায় প্রদত্ত আয় ও সম্পদের তথ্যের সম্পূর্ণতা ও সঠিকতা যাচাই করবে18 ।মেধাভিত্তিক নেতৃত্ব নির্বাচন ও মনোনয়ন প্রক্রিয়া: রাজনৈতিক দলগুলোকে মেধাভিত্তিক প্রবেশের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, পেশাজীবী সমিতি এবং সুশীল সমাজকে নেতৃত্ব অন্বেষণ ও বিকাশে জড়িত করা হবে
24 । এর মধ্যে ইন্টার্নশিপ, বিতর্ক এবং নীতি-বুটক্যাম্প অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত24 । নৈতিক স্খলনের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দলীয় পদ এবং মনোনয়ন থেকে বাদ দিতে হবে22 ।আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন: সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সুপারিশ করেছে, যেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত মোট ভোটের অনুপাতে উচ্চ কক্ষ নির্বাচিত হবে
26 । এর লক্ষ্য হলো তরুণ, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা22 ।
জনসচেতনতা ও সুশীল সমাজের ভূমিকা
দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা: দুর্নীতি দমনে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণসচেতনতা সৃষ্টি ও একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
11 ।গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কার্যকর নজরদারি: গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং জনগণকে স্বাধীনভাবে দুর্নীতি সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ ও সমালোচনা করার সুযোগ দিতে হবে
1 । সুশীল সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রহরী হিসেবে কাজ করে, সংস্কারের জন্য ধারণা প্রদান করে, জনমতকে একত্রিত করে এবং প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে17 ।নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন: চরিত্র গঠন এবং সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও সহানুভূতির মতো মূল মূল্যবোধের বিকাশ একটি সুসংহত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের জন্য অপরিহার্য
27 । নৈতিক শিক্ষাকে সকল স্তরের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত25 ।রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন: রাজনীতিবিদদের সেবক হিসেবে দেখা: একটি সাংস্কৃতিক রূপান্তর প্রয়োজন, যেখানে রাজনীতিবিদদের জনগণে সেবক হিসেবে দেখা হবে, শাসক হিসেবে নয়
24 । জনগণ এখন আরও সচেতন ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাবি করছে24 ।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সর্বোত্তম অনুশীলন গ্রহণ
অর্থ পাচার রোধ ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা: উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দুদক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় নিয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে
22 । আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ট্যাক্স ম্যাটার্স-এ পারস্পরিক প্রশাসনিক সহায়তার কনভেনশনে যোগদান এবং কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (সিআরএস) বাস্তবায়ন করা উচিত18 ।আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন ও মানদণ্ড অনুসরণ: বাংলাদেশ ইউএনসিএসি (জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন) অনুমোদন করেছে
13 । এর আরও কার্যকর অনুসরণ ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপ (ওজিপি) উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করার সুপারিশ করা হয়েছে18 । হংকং-এর আইসিএসি (স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন)-এর মতো সফল দুর্নীতিবিরোধী মডেলগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যা দেখিয়েছে যে ব্যাপক দুর্নীতিও কার্যকর প্রয়োগ, জনঅভিযোগ ব্যবস্থা, হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব28 ।
সংস্কারের এই বিশাল পরিসর নির্দেশ করে যে, খণ্ড খণ্ড প্রচেষ্টা যথেষ্ট হবে না। একটি সামগ্রিক এবং সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন, যেখানে এক ক্ষেত্রের পরিবর্তন অন্য ক্ষেত্রের পরিবর্তনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করবে। উদাহরণস্বরূপ, সংস্কার কমিশনগুলো
"জিরো টলারেন্স" নীতির ঘোষণা সত্ত্বেও
জনসচেতনতা, সুশীল সমাজের প্রহরী ভূমিকা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের উপর জোর দেওয়া
সারণী ৩: দুর্নীতি দমন ও সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবিত সংস্কার ও উদ্যোগসমূহ
সংস্কারের ধরণ | সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ | বিবরণ | সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র |
আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার | দুদক শক্তিশালীকরণ ও স্বাধীনতা | সাংবিধানিক মর্যাদা, কমিশনার বৃদ্ধি, স্বচ্ছ নিয়োগ, প্রাক-তদন্ত বাতিল। | |
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বৃদ্ধি | বিচার বিভাগীয় সংস্কার, আচরণবিধি, অনলাইন ব্যবস্থাপনা। | ||
প্রশাসনিক সংস্কার ও জবাবদিহিতা | জনপ্রশাসন সংস্কার, স্বার্থের সংঘাত আইন, উচ্চপদে প্রেষণ বন্ধ। | ||
তথ্য অধিকার ও হুইসেলব্লোয়ার সুরক্ষা | আইনের কার্যকর প্রয়োগ। | ||
সরকারি সেবায় এন্ড-টু-এন্ড অটোমেশন | সকল সরকারি সেবায় স্বয়ংক্রিয়তা। | ||
রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার | রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র | দলীয় সংবিধান পরিবর্তন, মেধাভিত্তিক নেতৃত্ব, বংশানুক্রমিক রাজনীতি বাতিল। | |
নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা | কঠোর আইন, তহবিল প্রকাশ, ইসি কর্তৃক যাচাই। | ||
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন | দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, উচ্চ কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব। | ||
জনসচেতনতা ও সুশীল সমাজের ভূমিকা | দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন | গণসচেতনতা সৃষ্টি, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। | |
গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের নজরদারি | স্বাধীনভাবে তথ্য প্রকাশ, প্রহরী ভূমিকা। | ||
নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন | চরিত্র গঠন, পাঠ্যক্রমে নৈতিকতা অন্তর্ভুক্তিকরণ। | ||
রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন | রাজনীতিবিদদের সেবক হিসেবে দেখা। | ||
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সর্বোত্তম অনুশীলন | অর্থ পাচার রোধ ও অর্থ ফেরত আনা | টাস্ক ফোর্স গঠন, আন্তর্জাতিক ট্যাক্স কনভেনশন। | |
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ | ইউএনসিএসি বাস্তবায়ন, ওজিপি-তে যোগদান, সফল মডেল থেকে শিক্ষা। |
উপসংহার: একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্নীতি একটি গভীর পদ্ধতিগত সমস্যা, যা ঐতিহাসিকভাবে প্রোথিত এবং শাসনব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সমাজের উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে। সিপিআই স্কোরের ক্রমাগত পতন এবং সরকারি খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। যদিও এই চ্যালেঞ্জ বিশাল, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব এবং এর ফলস্বরূপ গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো পরিবর্তনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে।
এই বিশ্লেষণের মূল বার্তা হলো, যেকোনো দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগের সাফল্যের জন্য প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই অনেক ভালো উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। তবে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টা এবং একটি "নতুন শাসনব্যবস্থার কাঠামো" প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য আশার সঞ্চার করে।
একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ কেবল একটি স্বপ্ন নয়, বরং এটি একটি অর্জনযোগ্য লক্ষ্য, যার জন্য প্রয়োজন একটি টেকসই, বহু-মাত্রিক পদ্ধতি। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে শক্তিশালী আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন, সক্রিয় জনসম্পৃক্ততা ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ, এবং কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। এই অনন্য সংস্কারের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ তার অস্থির অতীত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এবং একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে, যেখানে সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব বিকশিত হবে এবং জনগণের সুশাসন ও টেকসই উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে।
0 Comments