‘স্যার, দেখো, উধার কুছ হো রাহা হ্যায়।’ আমার ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইয়েমেনি গাড়িচালক খালেদের কথায় মুখ তুলে সামনের দিকে তাকালাম। আমি সে সময় আইপ্যাডে ম্যাপের সঙ্গে আমাদের বর্তমান অবস্থান এবং রাস্তাটা মিলিয়ে নিচ্ছি। আইপ্যাড থেকে মুখ তুলে দেখতে পেলাম, রাস্তার ওপর একটা সাময়িক চেকপোস্টের সামনে আমাদের গাড়িবহরের প্রথমের এসকর্ট পিকআপটি দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনেই আমার দলের অন্য তিনজনকে বহনকারী গাড়িটিও দাঁড়ানো। আমাকে বহনকারী গাড়িটি ছিল তৃতীয় অবস্থানে। তার পেছনেই দ্বিতীয় সশস্ত্র এসকর্ট গাড়ি। সাধারণত এসব রাস্তায় স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সাময়িক চেকপোস্ট বানিয়ে রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনে নিরাপত্তা তল্লাশি চালায়, যথাযথ পরিচয় পেলে ছেড়ে দেয়। যেকোনো দেশে জাতিসংঘের সদস্য ও যানবহরের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের চার্টার অনুযায়ী সদস্যদেশগুলো সে আইন মানতে বাধ্য। তাই আমি এই সাময়িক বাধায় চিন্তিত হলাম না।
তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছিল বলে আমার কিছুটা সন্দেহ হতে লাগল। এমন সময় দেখি, সামনের গাড়ি থেকে আমার দলের সবাই নেমে যাচ্ছে। আর অস্ত্রধারী একজন লোক তাদের গাড়ির পাশে লাইন করে দাঁড় করাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আরেকজন সশস্ত্র লোক আমার গাড়ির সামনে এসে আমাকে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত করল। আমাদের চলার পথে এই ধরনের পরিস্থিতিতে গাড়ি থেকে নামা বারণ। তাই আমি ভাবছি, কী করব?
আমাকে ইতস্তত করতে দেখে সশস্ত্র লোকটি তার জ্যাকেটের ভেতর থেকে একটা গ্রেনেড বের করে দেখাল। ইশারায় সেটা ফাটিয়ে দেওয়ার হুমকি দিল। উপায়ান্তর না দেখে সবাইকে নিয়ে আমি গাড়ি থেকে নামলাম। সশস্ত্র লোকটি আমাকে অস্ত্রের মুখে দাঁড় করিয়ে আরবি ভাষায় চিৎকার করে নানা প্রশ্ন করতে শুরু করল। আমি ইংরেজি আর ভাঙা ভাঙা আরবিতে কিছু বলার চেষ্টা করতেই লোকটা আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে আমাকে শার্টের কলার ধরে টেনে নিয়ে তাদের একটি গাড়িতে তুলল আর আশপাশ থেকে একে-৪৭ অস্ত্র হাতে বেরিয়ে এল স্কার্ফে মুখ ঢাকা আরও কিছু লোক। তারা আমাকে গাড়িতে ওঠাতে দেখে জান্তব উল্লাসে রক্ত হিম করা কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল, ‘আল্লাহু আকবর!’
আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম, এটা একটা অপহরণের ঘটনা। আমরা সম্ভবত পৃথিবীর ভয়ংকরতম সশস্ত্র একদল সন্ত্রাসীর হাতে অপহৃত হতে যাচ্ছি।এভাবেই শুরু হলো আমাদের অপহরণের নাটক, সিনেমা বা গল্পের চেয়েও যা রোমহর্ষ ও শ্বাসরুদ্ধকর।
0 Comments